মুনিরুল তারেক:
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিপন মিয়ার বিরুদ্ধে নানাবিধ অসাধু কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। আউটসোর্সিংয়ে কর্মচারী নিয়োগে বাণিজ্য এবং তাদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা আদায়, সরকারি কোয়ার্টার বরাদ্দ নিয়ে অবৈধভাবে ভাড়া দেওয়া, সংগঠনের পদ ব্যবহার করে হাসপাতালের আশপাশে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে অর্থ আদায়সহ অন্যের স্ত্রী ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় শিপন মিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক গাড়ি পোড়ানোর মামলা।
ঢামেক হাসপাতাল কর্মচারীদের একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদেও শিপন মিয়া বীরদর্পে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করে বেড়ান। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির নেতা হওয়ায় তার অনুসারী বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের শ্রমিক হিসেবে ঢামেক হাসপাতালে চাকরি দিয়ে সেখানে নিজের শক্তিশালী বলয় গঠন করেছেন।
অভিযোগ আছে, শিপন মিয়া আজিমপুর এলাকায় সরকারি কোয়ার্টার বরাদ্দ নিয়ে তার বাসায় সাবলেট ভাড়া দিয়েছেন। এ নিয়ে জিজ্ঞেস করলে বলছেন, ভাড়া দেননি। তার ভাই পরিবারের সঙ্গে থাকেন। তবে শিপনের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছে, তিনি সাবলেট ভাড়া দিয়েছেন, যা সরকারি আবাসন বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী অবৈধ। নিজের বাসা ভাড়া দেয়ার পাশাপাশি আনিসুর রহমান নামের তার এক সহকর্মীর নামে বরাদ্দ নেয়া কোয়ার্টারও ভাড়া দিয়ে অর্থ আদায় করছেন শিপন।
করোনা পরিস্থিতির মাঝে জনবল দরকার হলে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ১৬৫ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয় ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সে সময় শিপন তার অনুসারী রাজনৈতিক কর্মীদের তালিকা দিয়ে তাদেরও নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগের নামে এসব কর্মচারীদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ শোনা যায়। এছাড়া বিভিন্ন সময় নিয়োগ দেওয়া কর্মচারীরা বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে আয় করা টাকা থেকে তাকে চাঁদা নিয়ে থাকে বলেও জানা গেছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কিছু নারী-পুরুষ ট্রলি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। যারা রোগী গেলেই ট্রলি নিয়ে ওয়ার্ডে পৌঁছে দিয়ে টাকা দাবি করে। চাহিদা মত না পেলেই রোগীর স্বজনের সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে। এরা কেউ হাসপাতালের স্টাফ নয়। এভাবে আদায় করা টাকা থেকেও ভাগ নিয়ে থাকে কর্মচারী সমিতির নেতারা। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে শিপন মিয়া বলেন, এটা আমরা জানি না। পরিচালক সাহেব জানেন। আমরা কোনো টাকা নেই না।
ঢামেক হাসপাতাল এলাকার চারপাশের ফুটপাতে দোকান রয়েছে অনেক। অভিযোগ আছে, সেখানে দোকান বসিয়ে প্রতিদিন টাকায় আদায় করে থাকেন এই শ্রমিক নেতা।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, চানখাঁরপুল এলাকার নামকরা একটি বিড়িয়ানি রেস্টুরেন্টের মালিকের স্ত্রীকে ভাগিয়ে বিয়ে করেছেন। রেস্টুরেন্ট মালিক স্ত্রীর নামে করা বাসাও এখন শিপন মিয়ার দখলে সূত্র জানিয়েছে।
সকল অভিযোগ প্রসঙ্গে শিপন মিয়া বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে সেগুলোয় আমি জামিনে আছি। কোয়ার্টার ভাড়া দেইনি, আমার ভাই সঙ্গে থাকে। আনিসুর রহমানের বরাদ্দ নেয়া কোয়ার্টারের একটা কক্ষে আমার মা থাকতেন। তিনিও ঢামেক হাসপাতালে চাকরি করতেন। ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেই না। ওটা যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তারা নেয়। কর্মচারী নিয়োগে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষ তালিকা চাইলে কিছু নাম দিয়েছি।